‘জাদুঘর দ্বীপ’
২২ মার্চ ২০১৩রাজধানী শহরের ঠিক মাঝখানে অথচ মহানগরীর কর্মব্যস্ততা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত এই জাদুঘর দ্বীপ৷ সেখানকার সবচেয়ে পুরনো জাদুঘরটির নাম ‘আল্টে ম্যুজেয়ুম' বা পুরনো জাদুঘর৷ প্রখ্যাত স্থপতি কার্ল ফ্রিডরিশ শিংকেল এর নকশা তৈরি করেছেন৷ ১৮২৩ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৩০ সালে৷ জার্মানির প্রাশিয়া সাম্রাজ্যের শিল্পকলার বিভিন্ন নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে সেখানে৷
মিউজিয়াম আইল্যান্ডটি যে স্প্রে নদীর মাঝখানের একটি দ্বীপ সেটা বোঝা যায় ‘বোডে মিউজিয়াম'এর কারণে৷ কেননা এই জাদুঘরটা নদী থেকে প্রাসাদের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে৷ ১৯০৪ সালে এই জাদুঘরটি স্থাপিত হয়৷ বাইজেন্টাইন আমলের বিভিন্ন নিদর্শন, মুদ্রা, ভাস্কর্য ইত্যাদি দেখতে চাইলে যেতে হবে বোডে মিউজিয়ামে৷
জাদুঘর দ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হলো ‘পের্গামন মিউজিয়াম'৷ সবগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে নতুনও৷ ১৯৩০ সালে এটি স্থাপিত হয়৷ গতবছর সেখানে গিয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ দর্শক৷ এটা শুধু এই মিউজিয়াম আইল্যান্ডের মধ্যেই নয়, পুরো জার্মানির মধ্যেও দর্শকদের কাছে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পের্গামন মিউজিয়াম৷
এই জাদুঘরের নিদর্শনগুলোর মধ্যে দর্শকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ‘পের্গামন আল্টার'৷ এটা একটি বেদি, যেটা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দিতে প্রাচীন গ্রিক শহর ‘পের্গামন' এর শাসক রাজা দ্বিতীয় ইউমেনেসের সময় নির্মিত হয়েছিল৷ পের্গামন শহরের বাগানে এটা স্থাপন করা হয়েছিল৷ সেই আসল কর্মটির পুরোটাই তুলে আনা হয়েছে বার্লিনের এই জাদুঘরে৷
পের্গামন আল্টারের পর পের্গামন মিউজিয়ামের আরেকটি দর্শনীয় নিদর্শন হলো ‘দ্য মার্কেট গেট অফ মিলেটুস'৷ এটি ১২০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত একটি তোরণ৷ ১৭ মিটার উঁচু আর ২৯ মিটার প্রশস্ত এই তোরণটি রয়েছে পের্গামন মিউজিয়ামে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পের্গামন মিউজিয়ামের ছাদ ভেঙে যাওয়ায় এই ঐতিহাসিক তোরণটির কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল৷
ব্যবিলন শহরের ‘ইশতার তোরণ'ও দেখতে পাওয়া যাবে পের্গামন মিউজিয়ামে৷ তবে সংস্কার কাজের জন্য আগামী বছর এই মিউজিয়ামটি বন্ধ থাকবে৷
পের্গামনের পরেই পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ‘নয়ে ম্যুজিয়ুম' বা নতুন জাদুঘর৷ ১৮৫৯ সালে স্থাপিত এই জাদুঘরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ এরপর সেটার সংস্কার কাজ শুরু হয়ে অবশেষে ২০০৯ সালে এটি আবার চালু হয়৷ নতুন জাদুঘরের বিভিন্ন সুপ্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা অবশ্যই মিশরীয় রানি নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তি৷
এই জাদুঘর দ্বীপের পঞ্চম জাদুঘরটি হলো ‘দি আল্টে ন্যাৎসিওনাল গালারি'৷ সেখানে উনিশ শতকের বিভিন্ন নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে৷
এই মিউজিয়াম আইল্যান্ডের দেখভাল করে ‘প্রাশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন'৷ ঐ সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য গঠিত হয় এই সংস্থাটি৷ এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হেরমান পারৎসিংগার বলছেন, ‘‘মিউজিয়াম আইল্যান্ডের বৈশিষ্ট্য হল তার ভবনগুলো৷ এছাড়া কীভাবে মিউজিয়াম সাজাতে হয়, শিল্পকলার বিভিন্ন নিদর্শন দেখাতে হয় সেটা জানতে হলে আসতে হবে এখানে৷ আর জাদুঘরের সংগ্রহশালাও বেশ সমৃদ্ধ৷ এখানে রয়েছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির ইতিহাস৷ একেবারে প্রস্তরযুগ থেকে শুরু করে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এর বিস্তৃতি৷''